বাবাকে হারানোর কষ্ট ভুলতে পারছেন না চঞ্চল

ভাবনা আর বিশ্বাসের এই বৈপরীত্য আমি এখনো মানতে পারিনি।

বাবাকে হারানোর কষ্ট ভুলতে পারছেন না চঞ্চল

নিউজডোর ডেস্ক ♦ বাবাকে হারানোর কষ্ট যেন ভুলতে পারছেন না বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। বাবাকে নিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেই চলেছেন চঞ্চল। গত ৩১ ডিসেম্বর ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে চঞ্চল লিখেন, বাবাকে নিয়ে আমরা হাসপাতালের এই কেবিনেই ভর্তি করেছিলাম। যদিও বাবার আর কেবিনে থাকা হয়নি, কারন শুরু থেকেই বাবাকে আই সি ইউ তে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। ভর্তির দিনই ডাক্তার বলে দিয়েছিলেন, এখান থেকে বাবার ফিরে আসার আর কোন সম্ভাবনা নেই,যদি না সৃষ্টিকর্তা অবাক কিছু ঘটান। তারপর থেকে আমরা শুধু অপেক্ষা আর চেষ্টা করেছি বাবাকে ফিরিয়ে আনতে।

বাবা প্রায় ১৫ দিন মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে হেরে গেলেন। ডাক্তারদের হিসেব মত যে কোন সময় চলে যাওয়ার কথা বললেও,বাবা ১৫ দিন লাইফ সাপোর্টে বেঁচে ছিলেন। সন্তান বা আত্মীয় পরিজন হিসেবে চোখের সামনে এই কষ্ট দেখা যায়না। একটা সময় প্রার্থনা করেছি বাবার জ্ঞান ফিরে আসুক,সুস্থ্য হয়ে যাক,বিনিময়ে আমরা সব কিছু করতে প্রস্তুত। ঠিক সেই আমরাই শেষের দিকে এসে,বাবার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে প্রার্থনা করেছি,বিশ্বাস করেছি,একমাত্র মৃত্যুই বাবাকে এই অসহ্য যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দিতে পারে। ভাবনা আর বিশ্বাসের এই বৈপরীত্য আমি এখনো মানতে পারিনি।

আমরা সহ বাবার ভালোবাসার মানুষগুলো প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ৯০২ নং কেবিনে বসে থাকতাম বাবার জন্য। এত ভীড, বসার জায়গা হতো না, তারপরেও কেউ সেখান থেকে আসতে চাইতো না। বাবার কারনেই কেবিনটা মিলন মেলায় পরিনত হয়েছিল।

আমরা আট ভাইবোন সহ পরিবারের সবাই কখনও এতদিন একসাথে থাকিনি। কত আত্মীয় পরিজনের সংগে যে দেখা হয়েছে কতদিন পরে,শুধু মাত্র বাবার কারনেই।

২৭ ডিসেম্বর সকাল থেকেই আমরা বুঝতে পারছিলাম,বাবাকে আর ধরে রাখতে পারবো না।ঠিক রাত ৮ টার দিকে ডিউটি ডক্টর কেবিনে ফোন করে জানালেন,বাবার হার্ট বিট একদম নেমে যাচ্ছে, সাথে সাথে আমরা দৌড়ে গেলাম আই সি ইউ তে। সত্যিই বাবার শরীরটা স্তব্ধ হয়ে গেছে। না ফেরার দেশে চলে গেল আমাদের বাবা।

১২ ডিসেম্বর অচেতন অবস্থায় ভর্তি হয়ে,২৭ ডিসেম্বর ঐ অবস্থাতেই বাবা চির বিদায় নিলেন। এই কয়দিন অন্তত আই সি ইউ তে বাবার বেডের সামনে দাড়িয়ে বাবার শ্বাস প্রশ্বাস চলছে কিনা দেখতাম,প্রাণটা আছে এই শান্ত্বনা নিয়ে ভেজা চোখে ফিরে আসতাম। মনিটরে তাকিয়ে যখন দেখলাম বাবার জীবনটা থেমে গেছে, কিছু সময়ের জন্য আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না,দেখতে পাচ্ছিলাম না।