রংপুরে স্ত্রীর করা যৌতুক মামলায় বিচারকের গ্রেফতারী পরোয়ানা (ভিডিও) 

বিয়ের আসরেই ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেছিল ওই বিচারক

স্টাফ রিপোর্টার ♦ রংপুরে স্ত্রীর করা যৌতুকের মামলায় বিচারক দেবাংশু কুমার সরকার (৩২) ও তার বাবা সুধাংশু কুমার সরকারের (৬০) বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেছে আদালত। বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক-১ এর বিচারক মোস্তফা কামাল এ আদেশ দেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে সরকারী কৌশলী খন্দকার রফিক হাসনাইন।  
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১ মে ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উত্তর খয়ড়াকুড়ি গ্রামের নারায়ন সরকারের মেয়ে ডাঃ হৃদিতা সরকারের সাথে বিয়ে হয় একই উপজেলার হালুয়াঘাট বাজারের সুধাংশু কুমারের ছেলে দেবাংশু কুমার সরকারের সাথে। বিয়ের আসরেই ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন দেবাংশু ও তাঁর পরিবারের লোকজন। এ ঘটনায় ওই সময় বিয়ে ভাঙ্গার উপক্রম হয়। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের কিছু দিনের মধ্যেই নতুন গাড়ি কেনার জন্য রংপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক দেবাংশু কুমার সরকার আবারও যৌতুক দাবি করে নানা ধরনের চাপ দিতে থাকেন। এর জেরে বিভিন্ন সময় হৃদিতাকে নির্যাতন করে আসছিলেন তিনি। এরপর হৃদিতা তার বাবার বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে অবস্থান করেন। এরই মধ্যে হৃদিতা জানতে পারেন দেবাংশু কুমার দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। এনিয়ে ১৭ এপ্রিল কোতোয়ালি থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। পরে ডাঃ হৃদিতা ১৯ এপ্রিল বিচারক দেবাংশু কুমার সরকার (৩২), তাঁর বাবা সুধাংশু কুমার সরকার (৬০), ফুপাত ভাই নিলয় দে সরকার (২৭) ও চাচা রঞ্জন সরকারে বিরুদ্ধে (৫) মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে চার্জশীট জমা দিলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক-১ এর বিচারক মোস্তফা কামাল দেবাংশু কুমার সরকার ও তার পিতা সুধাংশু কুমার সরকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে। এ সময় আদালতে আসামীরা অনুপস্থিত ছিলেন।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার বিএবিএম জাকির হোসেন বলেন, বাদী ও বিবাদী দুজনই সম্মানজনক পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। তাই এটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মামলা। আমরা আদালতে স্বাক্ষী ও আলামতের আলোকে  একটি পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করেছি। এনিয়ে ভিকটিম নারাজি দিয়েছেন। তাই আমাকে ও তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আদালতে ডাকা হয়েছিল কিছু বিষয় জানার জন্য। এটি বিচারিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ। আদালতে দাখিল করা  আমাদের প্রতিবেদন সঠিক হয়নি এটি সত্য না। পিবিআই সব সময় শতভাগ নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিকে তদন্ত করে আসছে। এখন বাদী-বিবাদী সবাই তো নিজের মত করে রিপোর্ট প্রত্যাশা করে। আদালত সিদ্ধান্ত নেবে কোন অংশটুকু আমলে নিতে হবে বা কোন অংশটুকু বাদ দিতে হবে।
সরকারী কৌশলী খন্দকার রফিক হাসনাইন বলেন, বিচারক দেবাংশু কুমার সরকারের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করেছিল। সেই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে আমাদের কিছুটা অসংগতি মনে হয়েছিল। সেজন্য বাদীর পক্ষ থেকে দরখাস্ত দেয়া হয়েছে। আজ আদালত পিবিআইয়ের কাছে সেই অসংঙ্গতির বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। পিবিআই আদালতের কাছে তাদের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। আদালতের বিচারক দেবাংশু কুমার সরকার ও তার বাবা সুধাংশু কুমার সরকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারীর আদেশ দিয়েছেন।