রসিক নির্বাচন: দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভীড়

যদি নতুন তালিকায় ভোট না হয় তা হলে কয়েক হাজার তরুণ-তরুণী ভোটার বাদ পড়বেন।

রসিক নির্বাচন: দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভীড়

নভেল চৌধুরী ♦ রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আসন্ন। এখনও দলীয় মনোনয়নের সিদ্ধান্ত না হলেও না পেলেও তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নিজেদের জায়গা মজবুত রাখতে সংবাদ সম্মেলন, ব্যানার-ফেস্টুন, কেন্দ্রীয় নেতাদের তদবির, মিছিল-মিটিংসহ ব্যাপক প্রচার প্রচারণার জন্য মাঠে নেমেছে সম্ভাব্য মেয়র-কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা। মহানগরের হোটেল-রেস্তোরাঁসহ চায়ের টঙয়ে চলছে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলাপচারিতা।
রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীসহ কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনী নকশা তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে নতুন ভোটার হওয়ার অপেক্ষায় থাকা তরুণ-তরুণীরা বলছেন, ‘এবারের নির্বাচনে আমরা ভোট দিতে পারবো তো!’ এ ব্যাপারে নির্বাচন অফিস বলছে প্রতিদিনই নতুন ভোটার হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনে পুরাতন নাকি নতুন ভোটার তালিকায় ভোট হবে তারা এখনও নিশ্চিত নন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে নির্বাচন কমিশন। 
জানা যায়, বিগত নির্বাচনে রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার ভোটার ছিল তিন লাখ ৮৮ হাজার ৪২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৯ এবং নারী এক লাখ ৯১ হাজার ৭৬২ জন। ১৯৬টি ভোটকেন্দ্রে, ভোটকক্ষ ছিল এক হাজার ১৭৭টি। 
এদিকে ২৭ ডিসেম্বর আরসিসিআই পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফারিহা আহমেদ দিশা বলেন, আমি এখনও ভোটার হয়নি। আশা ছিল এবার ভোট দেবো। কিন্তু নতুন ভাবে তালিকা প্রণনয়ন না হওয়ায় আমি ভোট দিতে পারব না। রবার্টসনগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ জানান, তার ছবি তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু ভোটার তালিকায় এখন পর্যন্ত নাম উঠেছে কিনা বলতে পারছেন না। ইমতিয়াজের খুব ইচ্ছে এবারের সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মনের মত প্রার্থীকে ভোট দেবেন। ইমতিয়াজের মত অনেকেই নতুন ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন। 
রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি নতুন তালিকায় ভোট না হয় তা হলে কয়েক হাজার তরুণ-তরুণী ভোটার বাদ পড়বেন।
মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, আ’লীগ নেতা রেজাউল ইসলাম মিলন, লতিফুর রহমান মিলন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আতাউর জামান বাবু, শ্রমিক লীগের নেতা আব্দুল মজিদসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতা গত কয়েক মাস থেকে দৌড়-ঝাপ করছেন। তারা সকলেই দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি। 
অন্যদিকে আবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের অনেক আগেই বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে রেখেছেন। অপরদিকে রওশনপন্থী সাবেক পৌর মেয়র আব্দুর রউফ মানিকও প্রচারণা চালাচ্ছেন। মহানগর বিএনপির আহবায়ক সামছুজ্জামান সামু, বিএনপি নেতা কাওছার জামান বাবলা, যুবদল নেতা নাজমুল ইসলাম নাজু, ইসলামী আন্দোলনে এটিএম গোলাম রব্বানিসহ ২৫ জনের বেশি প্রার্থী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়া নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে সহস্রাধিক প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকতা জিএম সাহতাব উদ্দিন বলেন, আগামী সোমবারের পূর্ণাঙ্গ তফসিলে সবকিছু পরিষ্কার হবে। প্রায় প্রতিদিনই নতুন ভোটার হচ্ছে। তবে কোন তালিকায় ভোট হবে এর সবকিছুর নির্দেশ দেবেন নির্বাচন কমিশন।
আগামী ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে ৮টা  থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে এবং ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে। নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ তফসিল আগামী সোমবার ঘোষণা করা হবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর নির্বাচন কমিশন ভবনে নবম কমিশন বৈঠক শেষে এ কথা জানান নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম। সর্বশেষ এই সিটিতে নির্বাচন হয় ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর। নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রæয়ারি। যেহেতু কোনো সিটির  মেয়াদ ধরা হয় প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর, তাই এই সিটিতে নির্বাচিতদের মেয়াদ  শেষ হবে ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রæয়ারি। তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন আইন অনুযায়ী  কোনো সিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণ করতে হয়। এক্ষেত্রে এই সিটি নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়েছে গত ১৯ আগস্ট। আর রংপুর সিটি নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রæয়ারি থেকে আগের ১৮০ দিনের মধ্যে।