তিস্তার পানি বিপদসীমার ৭০ সেঃমি উপরে, দিশেহারা কৃষক

প্রভাব পরেছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তার নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোতে

তিস্তার পানি বিপদসীমার ৭০ সেঃমি উপরে, দিশেহারা কৃষক

গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি ♦ দেশের উজানে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সিকিম, দার্জিলিং, জলপাইগুড়িতে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তা নদীর পানি সমতল বাংলাদেশে ১৯ অক্টোবর মধ্যরাত হতে বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করেছে।  যা বুধবার ( ২০ অক্টোবর) বর্তমানে ডালিয়া পয়েন্টে ৫৩.২৫ মি. লেভেল-, বিপদসীমার ৭০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। যার প্রভাব পরেছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তার নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোতে। হঠাৎ পানি বাড়ায় তলিয়ে গেছে হাজারো বাড়ি ঘর, হাঁস-মুরগীর খামার,ধান, আলু, রসুনসহ বিভিন্ন ফসলের খেত। কেটে রাখা ধানগাছ বানের পানিতে ভেসে গেছে। আলু খেত সম্পূর্ণ পানিতে ডুবে যাওয়ার কান্নায় ভেঙে পরেছে তিস্তা পাড়ের কৃষকরা।

বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকা বলছে,১৯ অক্টোবর রাতের পর থেকে ১২ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি সমতল ডালিয়া পয়েন্টে প্রায় ২০০ সেমি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পানি বৃদ্ধি ২০ অক্টোবর সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে এবং আরো ১০-১৫ সেমি. বৃদ্ধি পেতে পারে। পরবর্তীতে এই পানি হ্রাস পাওয়া শুরু করে ২১ অক্টোবর ভোর নাগাদ বিপদসীমার নিচে চলে আসতে পারে।

আগাম কোন সতর্কীকরণ বার্তা না পাওয়ায় ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে তিস্তাপাড়ের কৃষকরা। উপজেলার গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের গান্নারপাড় এলাকার কৃষক মোহাম্মদ আলী (৬৩) বলেন, আমার একর জমির ধান কেটে শুকানোর জন্য জমিতে রেখেছিলাম। সকালবেলা দেখি পানির স্রোতে ধান ভেসে যাচ্ছে। আরও ৮০ শতক জমির ধানগাছ পানিতে ডুবে আছে। একই গ্রামের কৃষক আবদুল (৫৫),মোতালেব (৫৩) আবু তালেব (৪৪) আব্দুল মালেক(৪৮), মনজুম(৫০), আলমগীর(৩৮) শাহআলম(৪৫) মোসলেম (৫২) সহ অনেকেই এবার তিস্তার বিস্তৃত চরে আলু চাষ করেছেন। পানিতে তাদের আলু খেত সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। এসব খেত সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার আশংকায় ভেঙে পরেছেন তারা।

এদিকে তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার কোলকোন্দ ইউনিয়নের অরক্ষিত ভাঙনপ্রবণ বিনবিনা এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যে কোন সময় নদী তীরবর্তী রাস্তা ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশের আশংকা করছে আতঙ্কিত চরবাসীরা।

কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু  লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লা আল হাদি জানান, মাইকিং করে মানুষদের নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য বলা হয়েছে। বিনবিনা থেকে ইচলি পর্যন্ত প্রায় কিলোমিটার এলাকা এবছর দফা বন্যায় ব্যপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিস্তার এই হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন আতঙ্কে নিদ্রাহীন রাত পার করছে এসব এলাকার মানুষরা। এছাড়া পানিবন্দি হয়ে পরেছে নিম্নাঞ্চলের প্রায় সহস্রাধিক পরিবার।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, অপ্রত্যাশিত এবং আকস্মিকভাবে উজানে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে পানি সমতল বিপদসীমা অতিক্রম করেছে এবং পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানান তিনি।